জুলাইযোদ্ধা থেকে কঠোর সমালোচক ওসমান হাদি
ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী

ছবি : সংগৃহীত
১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা থেকে রাজনীতিতে আসা শরিফ ওসমান হাদি তাঁর নানা বক্তব্যের জন্য আলোচিত। গত বছর ১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর রামপুরা ও বাড্ডা এলাকায় ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের অন্যতম এই সমন্বয়ক আসছে সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করে প্রচারে নামেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত ওসমান হাদি হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
জামায়াত-এনসিপি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে: মির্জা ফখরুল
৩৩ বছর বয়সী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঝালকাঠিতে। নেছারাবাদ মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাসের পর ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নিপীড়নবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের সম্মুখসারিতে ছিলেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ওসমান হাদি একজন কবি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি সাইফুর’স এবং একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াতেন। রাতের ভোটখ্যাত ২০১৮ সালের নির্বাচন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে তুখোড় বক্তব্যের কারণে হাদি সাধারণ মানুষের কাছেও পরিচিত হয়ে ওঠেন। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য ব্যাপক প্রচার পায়।
গত বছর ১৩ আগস্ট ইনকিলাব মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন ওসমান হাদি। পরের মাসে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটিতেও ছিলেন। কিন্তু এনসিপি গঠনের সময়ে দলটিতে যোগ দেননি। সিদ্ধান্ত নেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সপক্ষে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ইনকিলাব মঞ্চে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করবেন। সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্র চাঁদায় পরিচালিত এ সংগঠন ইনকিলাব পাঠাগার এবং সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র করেছে।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ইনকিলাব মঞ্চের সংশ্লিষ্টতা, কঠোর ভাষায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতানেত্রী এবং দলটির প্রতি সহানুভূতিশীল বুদ্ধিজীবীদের বিরোধিতার কারণে ওসমান হাদি সমালোচিতও হয়েছেন। যদিও হাদি তাঁর গালিগালাজপূর্ণ বক্তব্যকে ‘মুক্তির মহাকাব্য’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে তাদের কাছে দুঃখপ্রকাশও করেন। তবে সমর্থকরা তাঁর কর্মকাণ্ড ও বক্তৃতাকে জুলাইয়ের অবিচল অবস্থান হিসেবেই দেখেন। তাঁকে অভ্যুত্থানের অন্যতম ধারক হিসেবে বিবেচনা করেন।
কোনো দলে যোগ না দিয়ে হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে কয়েকমাস ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার হাড়িখালী গ্রামের মুন্সিবাড়ির মরহুম মাওলানা আব্দুল হাদির ছোট ছেলে। নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ছিলেন মাওলানা আব্দুল হাদি। তাঁর ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট হাদি। ওসমান হাদি কয়েকমাস আগে পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন এবং জুলাইয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিচার দাবির আন্দোলনেও পুরোভাগে ছিলেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব মঞ্চের ঘোষিত নীতি হচ্ছে, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন, যেখানে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও ন্যায়বিচার প্রধান মূল্যবোধ হিসেবে থাকবে।পুরোনো ধারার রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে ওসমান হাদি প্রায়ই বিএনপি-জামায়াতেরও সমালোচনা করেন। কাঠামোগত দুর্বলতা এবং দৃশ্যমান পরিবর্তনের ঘাটতির কারণে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারেরও একজন সমালোচক।


