শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত

ছবি : সংগৃহীত
০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ পিএম
রমজান ইসলামের বরকতময় একটি মাস। কিন্তু রোজার জন্য কেবল রমজান মাসই নির্দিষ্ট নয়, সারা বছরই রোজা রাখা যায়। রমজানের রোজা ফরজ এবং ফজিলতের দিক থেকে বেশি মর্যাদাশীল। অন্যান্য মাসের রোজার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ফজিলতের কথা বর্ণিত আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায় সারা বছরই রোজা রাখতেন। তিনি কিছু কিছু রোজার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। শাওয়াল মাসের ছয় রোজা তার মধ্যে অন্যতম।

সবাইকে সতর্ক করলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন (পূর্ণ) এক বছর রোজা রাখল। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)
আবু আইয়ুব আল আনসারি (রা.) এ হাদিসের বিশ্লেষণ করে বলেছেন, রমজানের রোজার বিনিময়ে ১০ মাস এবং শাওয়ালের রোজার বিনিময় দুই মাস, মোট এক বছরের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। কেননা একটি সৎকাজের বিনিময় হচ্ছে ১০ নেকি যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার ১০ গুণ। (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬০)
সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা। অপর রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (মুসলিম, ৫/১১৬৪; দারেমি, হাদিস : ১৭৫৫)
শাওয়ালের ছয় রোজার ক্ষেত্রে বিধান কী হবে, এগুলো কি ধারাবাহিভাবে রাখা জরুরি, নাকি বিরতি দিয়েও রাখতে পারবে—এ বিষয়টি নিয়ে নানা বিভ্রান্তি দেখা যায়। মূলত জনশ্রুতি অনুসারে আমল করার ফলেই এ-জাতীয় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তাই অনেকেই প্রশ্ন করেন, রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয় একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করে নেওয়া কি জরুরি, ভিন্ন-ভিন্নভাবে আদায় করলে কি হবে না। আমি এ রোজাগুলো তিন দফায় রাখতে চাই। অর্থাৎ সপ্তাহান্তের ছুটির দুই দিনে রোজাগুলো আদায় করতে চাই।
তাদের অবগতির জন্যে জানানো যাচ্ছে যে, শাওয়ালের সাওম ধারাবাহিকভাবে একসঙ্গে রাখা জরুরি নয়। একসাথে বা ভিন্ন-ভিন্ন উভয়ভাবেই শাওয়ালের রোজা আদায় করা যায়। তবে শাওয়ালের রোজা যত দ্রুত রাখা যায় ততই কল্যাণ। কেননা, কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা কল্যাণকর্মে প্রতিযোগিতা করো। (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২১)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাতের প্রতি। (সুরা ইমরান, আয়াত : ১৩৩) মূসা (আ.) বলেছেন, হে আমার রব! আমি তাড়াতাড়ি করে আপনার নিকট এসেছি, যাতে আপনি আমার ওপর সন্তুষ্ট হন। আর দেরি করাটা খোদ একটি সমস্যা ও আপদ। শাফেঈ এবং হাম্বলি মাজাহাবের অনুসারীগণ এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। তবে দ্রুত আদায় না করলেও কোনো সমস্যা নেই। সে হিসেবে যদি মাসের মাঝখানে অথবা শেষে আদায় করে নেওয়া যায় তবুও কোনো অসুবিধা হবে না।
ইমাম নববি (রহ.) বলেছেন, আমাদের মাজহাবের আলেমদের বক্তব্য হলো, শাওয়ালের ছয় সাওম আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিস তাদের প্রমাণ। তারা আরও বলেছেন, শাওয়ালের সাওম ধারাবাহিকভাবে একসঙ্গে মাসের শুরুতেই আদায় করা মুস্তাহাব। যদি ভিন্ন-ভিন্নভাবে রাখা হয় অথবা শাওয়াল চলে যাওয়ার পরে রাখা হয় তবুও তা জায়েজ হবে। হাদিসের বক্তব্যে যেহেতু ব্যাপকতা রয়েছে, কাজেই এরূপ ব্যক্তি মূল সুন্নত আদায় করেছে বলে ধরে নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো ইখতেলাফ নেই। ইমাম আহমদ ও দাউদের বক্তব্য এটাই।’ (আল মাজমু শারহুল মুহাজ্জাব)