১০ কাজে শিশুদের সমাজসেবা

প্রতীকী ছবি

ইসলাম ডেস্ক

১৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম

আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই শৈশব থেকে শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক। ইসলামের একটি প্রধান শিক্ষা হলো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সাহায্য করা। অন্যান্য বিষয়ের মতো শিশুকে শৈশব থেকেই মানুষ ও সমাজের সেবা করতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আর তারা তা করতে পারে অর্থ ব্যয় না করেই।


রোজার ফজিলত নিয়ে ৭ হাদিস

শিশুরা যে কাজের মাধ্যমে সমাজসেবা করতে পারে, এমন ১০টি বিষয় তুলে ধরা হলো:


১. টিফিন শেয়ার করা : শিশুরা বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন শেয়ার করলে তার ভেতর অতিথি সেবার গুণ তৈরি হবে। বিশেষ করে দরিদ্র সহপাঠী যারা বিদ্যালয়ে টিফিন নিয়ে আসতে পারে না, তাদের সঙ্গে শিশুরা টিফিনের খাবার শেয়ার করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে খাবার দান করে।’ (সুরা দাহর, আয়াত : ৮)

২. অসুস্থ গুরুজনের সেবা করা : পরিবারে কোনো গুরুজন অসুস্থ হলে শিশুদেরকে সেবার জন্য এগিয়ে দেওয়া উচিত। এতে তাদের ভেতর রোগী ও দুস্থ মানুষের সেবা করার মানসিকতা তৈরি হবে, তার ভেতর বৃদ্ধি পাবে মমত্ব ও সহানুভূতি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলিম তার কোনো অসুস্থ ভাইকে দেখার জন্য পথ চলে, তাহলে যতক্ষণ সে পথ চলে, ততক্ষণ সে জান্নাতের বাগানের মধ্যে বিচরণ করতে থাকে। যখন সে উক্ত অসুস্থ মানুষের পাশে বসে, তখন সে আল্লাহর রহমতের মধ্যে ডুবে যায়। যদি সে সকালে অসুস্থকে দেখতে যায়, তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যদি সে সন্ধ্যায় বের হয়, তাহলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৯)

৩. পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা : নিজের শোয়ার ঘর, বাড়ি, স্কুল ও চলাচলের রাস্তা পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব শিশুকে শেখাতে হবে। যেন সে নিজে যেখানে-সেখানে চিপস, চকলেট বা অন্য কোনো খাবারের প্যাকেট অথবা অন্য কোনো ময়লা না ফেলে। আর কেউ ফেললে, সে যেন তা তুলে নির্ধারিত স্থানে ফেলে দেয়। পরিবেশ সুন্দর রাখার প্রচেষ্টা ইসলামের দৃষ্টিতে সদকাস্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা একটি সদকা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১২৮৫)

৪. পড়ায় পিছিয়ে থাকা বন্ধুদের সাহায্য করা : মানুষকে জ্ঞান শেখানো সওয়াবের কাজ। বিশেষ করে দ্বীনি ইলম বা ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া সওয়াবের কাজ। এতে যে শেখে এবং অন্যকে শেখায়, উভয়ে সওয়াবের অধিকারী হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪১০)

৫. অন্যকে পানি পান করানো : বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় শিশুদেরকে খাবারের পানি দেওয়া হয়। এই পানি সে নিজে পান করবে এবং অন্যকেও করতে দেবে। কেননা পানি পান করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ এবং তা উত্তম সদকা। সাআদ বিন উবাদা (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! উত্তম সদকা কোনটি? তিনি বলেন, পানি পান করানো।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৬৫)

৬. ছোটদের প্রতি সদাচার করা : শিশুরা তাদের চেয়ে আরও ছোটদেরকে লেখাপড়াসহ অন্যান্য কাজে সাহায্য করে সওয়াবের অধিকারী হতে পারে। মহান আল্লাহ ভালো কাজে অন্যকে সাহায্য করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নেক কাজ ও আল্লাহভীতিতে পরস্পরকে সাহায্য করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)

৭. প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার : শিশুদের মাধ্যমে প্রতিবেশীদের বাড়িতে উপহার পাঠানো, তাদের ভালো-মন্দের খোঁজ নিতে পাঠানো উচিত। এতে সে সামাজিক হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করার মাধ্যমে সে সওয়াব লাভ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায়, অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১২)

৮. উপকারীর জন্য দোয়া করা : কেউ কোনো উপহার দিলে, উপকার করলে বা সাহায্য করলে তার জন্য দোয়া করেও শিশুরা সওয়াবের অধিকারী হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে তোমাদের জন্য কোনো ভালো কাজ করে, তাকে প্রতিদান দাও। যদি প্রতিদান দেওয়ার মতো কিছু না পাও, তবে তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করো, যতক্ষণ না দোয়া তার ভালো কাজের সমপরিমাণ হয়।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৬৭২) উপকারীর জন্য দোয়া করার সহজ পদ্ধতি হলো ‘জাঝাকুমুল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন) বলা।

৯. প্রাণী ও গাছের প্রতি দয়া করা : গৃহপালিত প্রাণী ও বৃক্ষ-তরুলতার প্রতি দয়া করেও শিশুরা সদকার সওয়াব অর্জন করতে পারে। কেননা হাদিসে প্রাণীর প্রতি সদয় আচরণ করতে বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে আর তা থেকে কোনো পোকামাকড়, মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩২০)

১০. হাসিমুখে কথা বলা : পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও সহপাঠীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেও শিশুরা সদকার সওয়াব অর্জন করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাও একটি সদকা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)

শিশুরাই দেশ ও জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাই শিশুকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা দেশ, জাতি ও মানবতার সেবায় নিবেদিত হয়। আল্লাহ আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের চোখের প্রশান্তি করে দিন। আমিন।