ফেসবুক ব্যবহারের আদবকেতা

প্রতীকী ছবি
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
ধরা যাক, আপনার হাতে একটি চাকু দেওয়া হলো। চাকু দিয়ে আপনি আপেল খেতে পারেন। চাকু দিয়ে আপনি মানুষ খুন করতে পারেন। চাকুর কোনো দোষ নাই। চাকুর ব্যবহার কীভাবে করবেন, যিনি ব্যবহার করবেন- পুরো ব্যাপারটা তার ওপর নির্ভর করে। চাকু ফেলে রাখেন। মরিচা পড়ে যাবে। তার নিজেকে ব্যবহারের ক্ষমতা নাই। সেটা হোক ভালো বা মন্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক হলো চাকুর মতো। এর ভালো-খারাপ দুটি দিকই আছে। আপনি-আমি এটাকে কোন দিকে ব্যবহার করব, সেটাই কথা। এক বুজুর্গ ব্যক্তি ফেসবুকে অডিও দিলেন। সেখানে শুক্রবারে দরুদ শরিফ পাঠের ফজিলতের কথা বললেন। দরুদ শরিফকে কীভাবে সব সময় পড়া যায় সুন্দর করে, গুছিয়ে তিনি বললেন। তার গোছানো আন্তরিক, যুক্তিপূর্ণ বয়ানে আমি আকৃষ্ট হলাম। এতদিনে যা বুঝে আসেনি, তা ভালো করে বোধগম্য হলো। সঙ্গে সঙ্গে দরুদ শরিফের আমলটি শুরু করেছি।

তাবলিগের সাদপন্থীদের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত
আমার ধারণা, কেবল আমি নই, অনেকেই তার অডিও শুনে মুগ্ধ হয়েছেন। দরুদ শরিফের আমল করা শুরু করেছেন। এভাবে দাওয়াতের কাজে ফেসবুক ব্যবহার করা যায়। টাইম লাইনে হাদিস, কোরআনের বাণী পোস্ট করা যায়। ফেসবুক হলো যোগাযোগের মাধ্যম। একই সঙ্গে বহু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে বের করা যায়। একটি খবর এক ক্লিকে সবাইকে জানানো যায়। ম্যাসেঞ্জারে দ্রুত বার্তা আদান-প্রদান করা যায়। এসব ভালো কাজ। এখানে দোষের কিছু নাই। যুগের পরিবর্তনে, প্রযুক্তির পরিবর্তনে নিজেকে বদলাতে হয়। প্রযুক্তির সুফল বের করে নিতে হবে। কুফল না নিলেই হয়। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ; কোনটা ইসলাম সমর্থন করে- কোনটা করে না-- এই সামান্যতম জ্ঞানটুকু থাকতে হবে।
এখন যার ঈমান দুর্বল, নাজুক- তাকে ফেসবুকে বসিয়ে দিলে ক্ষতি হতে পারে। অবশিষ্ট ঈমানটুকুও চলে যেতে পারে। অশ্লীল ছবি, ভিডিও, মানুষকে ব্যঙ্গ করে ভিডিও, খারাপ আহ্বান, গুজব রটানো, নোংরা ছবি ফেসবুকে অহরহ দেখা যায়। আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। এসব না দেখলেই হয়।
বন্ধু নির্বাচন তাদের করুন, যারা আপনার চেয়ে আমলদার; আল্লাহ-ভীরু। রিকোয়েস্ট এলো, তার প্রোফাইল, টাইম লাইন, ফটো দেখুন। আপত্তিকর কিছু আছে কি না। একান্ত অপরিচিত কেউ- ফ্রেন্ড না বানানোই ভালো।
নিজের স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি ফেসবুকে দেওয়া একরকম নির্বুদ্ধিতা বটে। নিজের স্ত্রী একান্তই নিজের। অন্যদের ঘটা করে দেখানো অশোভনীয়। দৃষ্টিকটু তো বটেই। পারিবারিক ছবি পরিবারেই থাক না। কেন তা রাজ্যের মানুষকে দেখাবেন। আলেম-ওলামাদের ফেসবুক আইডি দেখুন। সেখানে তারা কত সুন্দর করে দ্বীনের কথা বলেন। আলেম-ওলামাদের বন্ধু বানালে লাভই আছে। তারা হলেন আল্লাহর বন্ধু। আর আল্লাহর বন্ধু যারা, তাদের কোনো চিন্তা নাই। আল্লাহ বলেন, জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুগণের কোনো ভয় নাই এবং তারা চিন্তাগ্রস্তও হবেন না। যারা ঈমান এনেছেন এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলেন বা তাকওয়ার পথ অনুসরণ করেন, তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার হেরফের হয় না। এটাই হলো মহাসফলতা। (সুরা ইউনুছ, ৬২-৬৪)।
ফেসবুকে ভালো বন্ধু যদি থাকে, আপনার ওয়ালে ভালো কিছুই আসবে। বন্ধু নির্বাচনটাই আসল। আবার ধরেন, কোনোরকম প্রযুক্তি ব্যবহার করলেন না। সেটা কিন্তু গোঁয়ার্তুমি হবে। সীমিত, কার্যকর, ভালো কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার ইসলাম সমর্থন করে। সেটা ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপে যাই হোক না কেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন ইসলামি দেশের বুজুর্গ ব্যক্তিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়।